"বিষয়ভিত্তিক কোরআন সমগ্র"

বিষয়ভিত্তিক কোরআন সমগ্র” বইয়ের সংক্ষিপ্তসার

“বই খানিকে কোরআনের সংক্ষিপ্ত বাংলা অভিধান বা ডিকশনারিও বলা যেতে পারে। কোরআনে আল্লাহ মানুষকে যে শত-হাজারো উপদেশ, আদেশ, নির্দেশনা প্রদান করেছেন – প্রয়োজনীয় সে সকল আয়াত প্রত্যেকের যার যার নিজ প্রয়োজন অনুযায়ী সহজেই খুঁজে পেতে এখন যে কেহ অত্র বই খানির সরনাপন্ন হতে পারেন।

যেমন: সুদ, কোরবানী, হালাল, হারাম, ঈমান, জিহাদ, হেদায়েত, হাশর, জান্নাত, জাহান্নাম, কবরের আযাব, নামাজ, রোজা, হজ্ব, জ্ঞান-বিজ্ঞান, ব্যবসা-বানিজ্য, কর্পোরেট ওয়ার্ল্ড, জমিজমা-সংক্রান্ত, পিতা-মাতার প্রতি সন্তানের দায়িত্ব ও কর্তব্য, বিবাহ সহ নানান বিষয় সংক্রান্ত যে কোন প্রশ্নের উত্তর এখন যে কেহ এ বই খানি থেকে সহজেই খুঁজে নিতে পারবেন।”

শুধুমাত্র ইসলামিক জ্ঞান অর্জনই বইখানির উদ্দেশ্য

সাম্প্রতিক সময়ে মানুষের ব্যস্ততা বেড়েছে আর মানুষ হয়ে গেছে দুনিয়ামুখি। ফলে কোরআন ও হাদিসের জ্ঞান থেকে মানুষ ক্রমস: দূরে সরে যেতে যেতে সবকিছু এমন এক ভয়াবহ পর্যায়ে এসে পৌঁছেছে যে, মানুষ তার আসল যে কর্তব্য (আল্লাহর ইবাদত করা) তা বেমালুম ভুলে যেতে বসেছে। সম্পদের মোহ আর নারীর আরাধনায় মানুষ এত ব্যাপকভাবে লিপ্ত হয়েছে যে, মানুষ হিতাহীত জ্ঞানশূন্য হয়ে গেছে বলেই মনে হচ্ছে। অথচ মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীন মানুষকে শুধুমাত্র তার ইবাদত-বন্দেগী করার জন্যই পৃথিবীতে প্রেরণ করেছেন। পৃথিবীর জীবন ক্ষণস্থায়ী আর মানুষের জন্য পরীক্ষাস্বরূপ মাত্র। মৃত্যুর পরেই প্রত্যেক মানুষকে পরকালের জীবনের মুখোমুখি হতে হবে, ভয়াবহ কবর আজাবের স্বাদ আস্বাদন করতে হবে, তারপরই হাশরের ময়দানে শেষ বিচারের মুখোমুখি হয়ে মানুষ চিরস্থায়ীভাবে কতক জান্নাতী আর কতক জাহান্নামী হয়ে অনন্তকাল জান্নাতের সুখ অথবা জাহান্নামের শাস্তি ভোগ করতে থাকবে। অথচ মানুষ এক মূহূর্তের জন্যও জাহান্নামের ভয়াল আজাব ও গজব সহ্য করার ক্ষমতা রাখে না। কাজেই মানুষকে কোরআন ও হাদিস দ্বারা সুন্দরভাবে বোঝাতে হবে, তাহলেই মানুষ বুঝবে, তাদের হুশ ফিরে আসবে। সে নিজে ও তার পরিবারবর্গকে জাহান্নামের অগ্নি থেকে রক্ষা করতে পারবে।

অথচ, প্রত্যেক ঘরে ঘরেই কোরআন রয়েছে, হাদিসের বই রয়েছে। কিন্তু তা থেকে কেউ পাঠ করেন না, সময় পান না। সময় কোথায়? দুনিয়া নিয়েই সবাই ব্যস্ত। আর যদিওবা কেহ কোরআন পড়েনও তবে তা পড়ছেন আরবিতে। এতে সওয়াব পাচ্ছেন ঠিকই, কিন্তু এর বাংলা অর্থ না পড়ায় কোরআনের মূল মর্মবাণী কিছুই বুঝছেন না, ফলে নিজেদের মধ্যে কাক্সিক্ষত পরিবর্তন আসছে না আর ঈমানও বৃদ্ধি পাচ্ছে না। আর যে আলেমগণ মানুষের হেদায়েতের জন্য কাজ করবেন, মানুষকে আল্লাহ-রাসূলমুখি করবেন বা করার কথা, তাদের অধিকাংশই বরং ইদানীং নিজেদের মধ্যে ছোটখাটো তুচ্ছাতি-তুচ্ছ বিষয়াবলি নিয়ে মতবিরোধে লিপ্ত রয়েছেন, এমনকি একে অন্যের মুখ পর্যন্ত দেখতে চান না। এছাড়াও বর্তমানে আলেমগণের বেশি সংখ্যকের মধ্যেই পর্যাপ্ত পড়াশোনার অভাব প্রকটভাবে চোখে পড়ে। তাদের ওয়াজ, বয়ান কিংবা বক্তব্য মানুষকে তেমন নাড়া দেয় না, আকর্ষণ করে না, বরং অধিকাংশেরই সারশূন্য বক্তব্য মানুষের বিরক্তিই শুধু বাড়ায়। মাত্র হাতেগোনা অল্পকিছু সংখ্যক আলেম রয়েছেন, যাদের বয়ান মানুষের মধ্যে পরিবর্তনের সূচনা করে, মানুষ হেদায়েত প্রাপ্ত হয়। এদের সংখ্যা দিন দিন কমে যাচ্ছে। এমতাবস্থায় বাংলায় পবিত্র কোরআনের অবশ্য পালনীয় উল্লেøখযোগ্য ও গুরুত্বপূর্ণ যাবতীয় উপদেশ ও নির্দেশ সম্বলিত সকল আয়াতসমূহকে বিষয়ভিত্তিকভাবে সাজিয়ে এই বইখানাতে সকল শ্রেণি-পেশার মানুষের জন্য এমনভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে যে, যেন এর থেকে সংশ্লিষ্ট সকলেই যে কোনো প্রয়োজনীয় বিষয়ে পবিত্র কোরআনের জ্ঞান অর্জনের মাধ্যমে হেদায়েত লাভ করতে পারেন। কোনটা ঠিক আর কোনটা ভুল, তা বুঝতে পারেন।

বইখানি সর্ম্পকে কিছু কথা

পবিত্র কোরআন আরবি ভাষায় অবতীর্ণ হয়েছিল, কারণ রাসূল (সা.) ও তৎকালীন আরব ভ‚খÐের মানুষ ছিলেন আরবি ভাষাভাষী, যাতে পবিত্র কোরআন তাদের কাছে সহজ বোধগম্য হয়। আমরা বাংলা ভাষাভাষীগণ পবিত্র কোরআন আরবি ভাষায় তেলাওয়াত করি, সওয়াব লাভ করি ঠিকই, কিন্তু এর মর্মবাণী অনুধাবন করতে সক্ষম হই না। সেজন্য গোটা কোরআনে মানুষের জন্য আল্লাহর কী কী উপদেশ, আদেশ ও নিষেধসমূহ অবশ্য পালনীয়Ñ তা সঠিকভাবে জানা ও বোঝার জন্য সমগ্র কোরআনকে বাংলায় বারবার পড়া এবং এর মর্মবাণী অনুধাবন করা প্রত্যেক মুমিনের জন্য অবশ্য কর্তব্য, যদি তিনি নিজে জাহান্নামের আগুন থেকে বাঁচতে চান এবং স্বজনদের বাঁচাতে চান।

সমগ্র কোরআন একবারে নাজিল হয়নি। বরং নবীজির নুবওয়াত লাভের পরবর্তী সুদীর্ঘ ২৩ বছরে ধরে বিভিন্ন পরিস্থিতি ও ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে আল্লাহ কতৃক কোরআনের বিভিন্ন আয়াতসমূহ ক্রমস: নাজিল হতে থাকে। ফলে কোনো সুনির্দিষ্ট বিষয়বস্তু সর্ম্পকে যদি কেহ পূনাঙ্গরূপ ধারণা লাভ করতে চান, তাহলে তাকে উক্ত সংশ্লিষ্ট বিষয়ে পবিত্র কোরআনের বিভিন্ন সুরায় বর্ণিত ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা উক্ত সংশ্লিষ্ট বিষয়ভিত্তিক যাবতীয় সকল আয়াতসমূহের একত্রীভূত করনের মাধ্যমেই কেবল ঐ বিষয় সর্ম্পকে পুর্ণাঙ্গ ধারণা বা জ্ঞান লাভ করা সম্ভব। উদাহরণ স্বরূপ : আপনি যদি ‘জাহান্নামের শাস্তি’ বিষয় সর্ম্পকে বিস্তারিত জানতে চান, তাহলে সমগ্র কোরআনে বিভিন্ন সুরায় জাহান্নামের শাস্তি সর্ম্পকে বিভিন্ন সময়ে যত আয়াতসমূহ নাজিল হয়েছে, তা বিভিন্ন সুরা থেকে তুলে এনে একত্রীভূত করনের মাধ্যমেই কেবলমাত্র আপনি এ সর্ম্পকে পরিপূর্ণ জ্ঞান বা ধারনা লাভ করতে পারবেন।

এই বইখানাতে সমগ্র কোরআনে মহান আল্লাহ মানুষের জন্য যত উপদেশ/নির্দেশ দিয়েছেন, তা প্রত্যেক সুনির্দিষ্ট বিষয়বস্তু কেন্দ্রিক সমজাতীয় সকল আয়াতসমূহকে একত্রিক করে জ্ঞানপিপাসু, লেখক ও গবেষকদের জন্য বিষয়ভিত্তিক উপস্থাপন করা হয়েছে, যাতে করে এর থেকে সংশ্লিষ্ট সকলেই কম-বেশি উপকৃত হতে পারবেন।

বইটিতে সর্বমোট ১৩০টি অধ্যায় ও অন্যান্য ছোট-বড় ৮৩৫টি অনুচ্ছেদে কোরআনের সকল গুরুত্বপূর্ন ও উল্লেখযোগ্য আয়াতসমূহ উপস্থাপিত হয়েছে।

সংক্ষিপ্ত লেখক পরিচিতি

জনাব মো: পারভেজ আহমেদ, পিতা: মৃত খুরশীদ আহমেদ, মাতা: মিসেস সালেহা আক্তার, চাঁদপুর জেলার ফরিদগঞ্জ থানার রূপসা গ্রামে এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্ম গ্রহন করেন। তার পূর্বপুরুষগনের আদি নিবাস লক্ষীপুর জেলার রায়পুর থানার শায়েস্তানগর গ্রামে এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে। তার পিতা মরহুম খুরশীদ আহমেদ তলক্ষীপুর জেলার, রায়পুর থানায়, নিজ গ্রাম শায়েস্তানগরে “জনকল্যান হাই স্কুল” প্রতিষ্ঠা করেন এবং মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত তিনি উক্ত স্কুলের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান শিক্ষক ছিলেন। ১৯৭১’এর মুক্তিযুদ্ধে তিনি চাঁদপুরে রাজাকারদের হাতে ধরা পড়েন ও পাকিস্তানী মিলিটারিদের হাতে নির্মম ভাবে শহীদ হন, পাকিস্তানি হানাদাররা তার লাশ চাঁদপুরের মেঘনায় ফেলে দেওয়ায় তার কোন কবর নেই।

জনাব পারভেজ আহমেদ বর্তমানে সিনিয়র মানব সম্পদ মহাব্যবস্থাপক হিসাবে দেশের অন্যতম স্বনামধন্য একটি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত আছেন। তিনি ১৯৮৬ সনে এসসএসসি এবং ১৯৮৮ সনে এইচএসসি পাশ করেন, ১৯৯১ সনে বিকম, ১৯৯৬ সনে এমকম পাশ করেন। এছাড়াও তিনি ১৯৯৬-৯৭ সনে সিএ কোর্স কমপ্লিট করেন এবং ২০০১ সনে এমবিএ কমপ্লিট করেন এবং ২০০২-২০০৩ সনে এলএল-বি পাশ করেন। আরো বহু বিষয়ে তিনি বিশেষ উচ্চতর ডিগ্রী লাভ করেন, এছাড়াও অসংখ্য ট্রেনিং করেন যা তার জ্ঞান লাভের ক্ষেত্রকে অনেক প্রসারিত করেছে।

Scroll to Top